পুনর্মিলন, দীর্ঘ পঁচিশ বছর পর

DeboJyoti Modak

অবসর সময়ে মাথার মধ্যে কত কিছু চিন্তাই তো ঘুরপাক খায় । তারমধ্যে কত স্মৃতি এসেও ভীড় করে । এই স্মৃতির সিংহভাগ জুড়ে থাকে ছেলেবেলার স্মৃতি । আর ছেলেবেলার স্মৃতি যখন; তার মধ্যে বিদ্যালয়, বন্ধু, পড়াশুনা, খেলাধূলো সবই থাকে ।

কানাইলাল বিদ্যামন্দির (ইংরাজী বিভাগ) এর ছাত্র ছিলাম । বিদ্যালয় থেকে পাশ করে বেরোনোর ২৫ টা বছর অতিক্রান্ত । কিন্তু সেই সব দিনের কথা আজও সযত্নে মনের মণিকোঠরে সংরক্ষিত আছে । তখনকার সময়ের বন্ধুদের কথা, শিক্ষক-শিক্ষিকাদের কথা আর বন্ধুদের সাথে মিলে করা সেইসব দুষ্টুমীগুলোর কথা । সেইসব বন্ধুদের মধ্যে কিছুজনের সাথে যোগাযোগ থাকলেও সকলের সাথে সরাসরি যোগাযোগ রাখা হয়ে ওঠেনি । কোন এক বন্ধুর কাছে অন্য বন্ধুর খবর নিয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হয় । কিন্তু মনে মনে সেইসব মানুষগুলোর সাথে সামনা সামনি হতে খুব ইচ্ছা হয় । খুব জানতে ইচ্ছা করে তারা কি করছে, কোথায় আছে, আর বর্তমানে কেমনই বা দেখতে হয়েছে তাদের ! আর এই ইচ্ছা কে বাস্তবে কার্যকরী করার লক্ষে পুনঃ মিলিত হবার ভাবনা চিন্তা শুরু হয় ।

যেমন ভাবনা তেমন কাজ । কিছু বন্ধুর সক্রিয় সহযোগিতায় শুরু হয় তার প্রস্তুতি । এতজনের সঙ্গে যোগাযোগ করে সকলকে virtually একত্রিত করার কাজ নেহাতই সহজ ব্যাপার নয় । এই প্রস্তুতি পর্ব চলে কম বেশী দুমাস ব্যাপী । যাই হোক, সেই পর্বও সফলভাবে উতরে গিয়ে একটি দিন নির্দিষ্ট হয় ।

১৬ ই অক্টোবর আজ সেই দিন, যে দিনটার জন্য আমরা সকলে অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করেছিলাম ।সকালবেলায় বিদ্যালয় প্রাংগনে পা রাখার সাথে সাথেই যেন ২৫ বছর আগে ফিরে গেলাম । এই জায়গায় চতুঃদিকে কত কত স্মৃতি ছড়ানো ছেটানো আছে, সেইসব ধীরে ধীরে মনে পরতে লাগলো । সেই মাঠ সেই শ্রেণিকক্ষ সেই চেয়ার-টেবিল-বেঞ্চ-বেঞ্চ । আজও সেই ঘন্টা তার নিজের স্থানে বিরাজমান । যার কর্কশ শব্দও শ্রুতিমধুর হয়ে যেত ছুটির ঘণ্টা বাজার সময় । কারণ এর পর আরও কিছুক্ষণ বিদ্যালয়ে খেলে বাড়ি ফেরার মজাই আলাদা । সম্মোহন ভাঙলো এক বন্ধুর ডাকে । তাকিয়ে দেখি সেই ছোটোবেলার প্রাণের সাথিদের একজন, তখনকার নিয়মিত খেলার সাথি । চারিদিকে তাকিয়ে দেখলাম কর্মব্যস্ততা । যে যার নিজ দায়িত্ব পালনে তৎপর । শুধু তো আমরা বন্ধুরা নই, আমাদের এই অনুষ্ঠানে আমাদের শিক্ষকমহোদয়গণও আমন্ত্রিত । তাঁরাই এই অনুষ্ঠানের মধ্যমণি । ছাত্রদের জীবনে তাঁদের ভূমিকা নিয়ে নতুন করে বলার কিছু নেই । ছাত্রদের স্বার্থে সেইসকল মানুষ গড়ার কারিগর তাঁদের সবটুকুই উজাড় করে দেন । তাঁদেরকে সন্মান জানানোর মধ্যে দিয়েই অনুষ্ঠানের শুভারম্ভ হয় । তাঁদের বক্তব্যের মধ্য দিয়েই হতে থাকে স্মৃতিচারণা । আমরা যেন সেই ২৫-৩0 বছর আগে আবার ফেরত চলে যাই । এই সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের মাঝেই চলতে থাকে স্বরচিত কবিতা পাঠ, গান ইত্যাদি । সবাই খুব আনন্দিত ও উদ্বেলিত । একসময় শেষ হয় অনুষ্ঠান । এবার সকলের ঘরে ফেরার পালা । শিক্ষকদের আশীষ মাথায় নিয়ে সকলেমিলে তাঁদের সুস্থ জীবন কামনা করে তাঁদেরকে বিদায় জানানো হয় । আজকের এই তিন চার ঘণ্টা আমাদের বাকি জীবনে সুস্থ ভাবে বেঁচে থাকার অনেক রসদ জুগিয়ে গেলো ।

আজকের এই দিনের অভিজ্ঞতা দুর্দান্ত । কত আবেগ যে মিশে আছে তা ভাষায় প্রকাশ করা সম্ভব নয় । শুধুমাত্র এই অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করবে বলে অন্য রাজ্যে বসবাসকারী এমনকি বিদেশে বসবাসকারী সহপাঠীরাও আজ হাজির । তাদের এই অদম্য ইচ্ছা অনুষ্ঠানে এক অন্যমাত্রা যোগ করেছে । আশা রাখবো এই দিনটা আমাদের জীবনে আবার ফিরে আসবে আর আমাদের এই বন্ধুত্ব চির অক্ষয় হবে ।

সকল শ্রদ্ধেয় শিক্ষকমহোদয়গণের চরণে আমার প্রণাম । আমার সহপাঠীদের জন্য থাকলো অফুরন্ত ভালোবাসা ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *