আবার ২৫ বছর পর

Satyabrata Ghosh

১৯৯৭ থেকে ২০২২…
সেই ছোট বেলার সাথিরা….
আবার কোন এক বিশেষ জাদুমন্ত্রে একদিন একসাথে….
জাদুমন্ত্রটা আর কিছুই নয়…
কানাই লাল বিদ্যামন্দির (ইং বিভাগ)
আমাদের প্রিয় কে এল ভি এম….
Amit Mookherjee যেদিন প্রস্তাব টা দিয়েছিল আমরা মুষ্টিমেয় কয়েক জন ছিলাম প্রথম থেকেই রাজি….
তারপরে সব উদ্যোগ কৃতিত্ব একা অমিতের… ও সাথে পেয়েছিল Amlan De Subrata Das Rajdip Pratap Dasgupta আর আমাদের KLVM হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপকে….
তারপর ১৬ অক্টোবর যত এগোতে থাকলো উত্তেজনার পারা বাড়তে থাকলো…. ইচ্ছুকদের সংখ্যা ১৫ থেকে লাফিয়ে ২৫..৪৫…৫৫…৬৫ ছাপিয়ে গেল….
১৬ অক্টোবর স্কুলে যখন পৌছালাম ঘড়িতে সকাল ৯ টা….
দীর্ঘ ২৩ বছর পর….. ১৯৯৯ এর পর আবার বি এন নন্দী ব্লকে পা দিলাম(ঢোকার সময় বাথরুমের গন্ধ টা একই রকম বিদ্যমান😜)…
স্কুল টা ঘুরে ঘুরে দেখতে লাগলাম….
সত্যি বলতে গেলে মন খারাপ হয়ে গেল…. স্কুলের এই ভগ্ন রূপ আশাও করতে পারিনি…. চারদিকে জঙ্গল…. ভাঙ্গা ঘর… ভাঙ্গা চেয়ার টেবিল… প্রায় ধ্বংসাবশেষ এ পরিণত দোতলা…..
চারদিকে সরকারের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নিয়ে চরম অবহেলার ছাপ প্রকটভাবে ফুটে উঠেছে….
ভাবতেও কষ্ট হচ্ছিল আমরা জীবনের ১২ বছর যে মন্দিরে কাটিয়েছি তার কি অবস্থা আজ….

তারপর যখন একে একে সবাই জড়ো হতে থাকল এককথায় ম্যাজিক শো শুরু হল যেন….
আজকের দিনের জন্য বিশেষ গেঞ্জিতে সবাই যেন স্কুল স্টুডেন্ট…

কারোর সাথে ৫ বছর কারোর সাথে ২০ এমনকি ২৩ বা ২৫ বছর পরও কারোর সাথে দেখা হল…
কোন ফরমালিটি ছিলনা…. ছিল গলা জড়িয়ে ধরা… বুকে জড়িয়ে ধরে খাঁটি বন্ধুত্ব…. সময়ের সাথে লড়াই করে পিছনে ফিরে যাওয়ার এক অসম প্রচেষ্টা….

সত্যি বলতে অনেককেই চিনতেই পারছিলাম না…. আমার ক্ষেত্রেও মনে হয় অনেকের একই অবস্থা…
আমরা একমূহুরতে যেন টাইম মেশিন এ চড়ে ৩০ -৩৫ বছর আগে ফিরে যাচ্ছিলাম….

এদের মধ্যে কারোর সাথে ক্লাস ১ কারোর সাথে ক্লাস ৫ বা তার পর থেকে আলাপ….
কারোর সাথে হয়ত এক সেকসানে ক্লাস ১০ অবধি পড়েছি…
আমি ধীরাজ অম্লান কৌশিক সুব্রত শুভ্রনীল তো এক বেঞ্চেই ৪-৫ টা বছর কাটিয়েছি…. ক্লাস বদলেছে… একসাথে বসাটা বদলায় নি.. মনে আছে বেঞ্চটার নাম করনই করেছিলাম “মক পার্লামেন্ট “….

মনে পড়ে যাচ্ছিল পিছনের মাঠে লুকিয়ে সিগারেট খাওয়া আর তার পর অনন্ত বাবুর হাতে ধরা পরে বেধরক…
দেবজ্যোতির আনা ক্যাম্বিস বলে টিফিনের সময় ফুটবল খেলা ছিল মাষ্ট…..
পাঁচিল টপকে সাইকেল নিয়ে পালানো….বইয়ের মধ্যে আরও ছোট ছোট কিছু বিশেষ বই আনা😜…..
স্কুলে আশার সময় আর ফেরার সময়ও খেলা ছিল জীবন….
স্যারের কাছে দোষ করলে হয় বেঞ্চের ওপর দাঁড়ানো বা দরজার বাইরে নী ডাউন….
আর স্কেলের বারি খায়নি এরকম তো খুঁজেই পাওয়া যাবে না….

অম্লানের সেই গল্প বলা…. বিশুর পান্ডব গোয়েন্দা সমগ্ৰর ছিল চরম আকর্ষণ….
আর প্রতাপের হাতের মার…. পুরো এ সেকসানের আতঙ্ক ছিল….

২৫ বছর পর কারোর চুলে সোনালী রেখা…কারও তো প্রায় ফাঁকা….
বর্ধিত মধ্যপ্রদেশ নিয়ে সবারই প্রায় হাঁসফাস অবস্থা…
কিন্তু স্কুলে পা দেওয়া ইস্তক… বন্ধুদের সাথে আমরা আবার সেই ১৯৮৭ – ১৯৯৭….
আর যখন একে একে স্যাররা এসে পৌছলেন…. আমরাও যেন স্কুল জীবনে ফিরে গেলাম….
প্রবীর বাবু আমাদের প্রীয় হেডু…. অনন্ত বাবু… শ্রী কুমার বাবু… আবীর বাবু… প্রদীপ বাবু… পানি বাবু…. কৃষ্ণেন্দু বাবু… বাকি সব স্যার দের সান্নিধ্যে তাদের আশির্বাদে ঐ মূহুর্ত গুলো যেন টাইম মেশিনের সাহায্যে আবার স্কুল জীবনে ফিরিয়ে নিয়ে গিয়েছিল….উনাদের ঋণ পরিশোধ করতে কোন দিন পারব না কিন্তু আজ উনাদের সম্বর্ধনা দেওয়ার যে সুযোগ পেলাম… নিজেদের ধন্য মনে করছি…

দীঘির পারে আমাদের বিশেষ আয়োজনের পর যখন সবার থেকে বিদায় নেওয়ার সময় এল চোখ গুলো যেন জ্বালা জ্বালা করে উঠছিল….
যতই ৪২+ হই না কেন…. এই কয়েক ঘণ্টা যেন আমাদের মধ্যে থেকে সেই কানাইলাল এর সাদা জামা কালো প্যান্ট পরা ছেলে গুলোকে বার করে এনেছিল….

আবার দেখা হবে… আবার আমরা ফিরে যাব স্কুল প্রাঙ্গনে… সেই স্কুল জীবনে…. হয়ত আরও অনেকের সাথে….

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *